শনিবার, ৭ জানুয়ারী, ২০১২

মু‘জিযা ও যাদুর মধ্যে পার্থক্য

বিশেষজ্ঞ আলিমদের মতে  মু‘জযা এবং যাদুর মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে ঃ
১.যাদুবিদ্যা শিক্ষার মাধ্যমে হাসিল করা হয়, কিন্তু মু‘জিযা শিক্ষার মাধ্যমে হাসিল করা যায় না। বরং আল্লাহ তা‘আলা যখন ইচ্ছা করেছেন তখন তিনি নবী-সাসূলগণের মাধ্যমে এর বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন।
২.যাদুর মুকাবিলা করা সম্ভব। তাই এক যাদুকর অন্য যাদুকরের যাদুকে নস্যাত করে দিতে পারে । কিন্তু মু‘জিযার মুকাবিলা করা কোন মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়।
৩. যাদুর কোন বাস্তবতা নেই। বরং যাদু হচ্ছে একটি দৃষ্টিবিভ্রম ও সম্মোহনজনিত বিষয়। পক্ষান্তরে মু‘জিযা কোন কৃষ্টিবিভ্রম বা কাল্পনিক বিষয় নয়। বরং মু‘জিযা হচ্ছে বাস্তব ঘটনা যা আল্লাহর কুতরতের নিদর্শন।
৪.যাদু প্রদর্শন করা হয় পার্থিব স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য । আর মু‘জযার বহিঃপ্রকাশ ঘটানো হয় দীনের সত্যতা প্রকাশের জন্য।
৫.যাদুকর তার ইচ্ছানুযায়ী যাদু প্রকাশ করতে পারে, কিন্তু মু‘জিযার প্রকাশ নির্ভর করে একমাত্র আল্লাহর তাআলার ইচ্ছার উপর।

মু‘জিযার তাৎপর্য

মু‘জিযা শব্দটি আরবী। এর আভিধানিক অর্থ পরাভূতকারী। আল্লামা তাফ্তাযানী (র) মু‘জিযার পারিভাষিক অর্থ এভাবে বর্ণনা করেছেন যে ঃ
“ মু‘জিযা বলা হয়, নবুওয়াত অস্বীকারকারীদের সাথে চ্যালেঞ্জ করার সময় নবুওয়াত প্রাপ্ত কোন ব্যক্তি হতে এমন অলৌকিক কাজ সংঘটিত হওয়া যার মুকাবিলা করতে অবিশ্বাসী সম্প্রদায় অক্ষম। ” 
বস্তুত মু‘জিযা প্রকাশের উদ্দেশ্য হল, নবী-রাসূলগণের দাবীর সত্যতা প্রমাণ করা এবং তাদের দাবীকে শক্তিশালী করা।
মু‘জযাকে আল রুরআনে ‘আয়াত’ ও ‘বুরহান’ বলা হয়েছে। আয়াত শব্দের অর্থ নিদর্শন বা আলামত। মু‘জিযা যেহেতু নবী-রাসূলগণের দাবীর পক্ষে নিদর্শন, তাই মু‘জিযাকে ‘আয়াত’ বলা হয়েছে। অনুরূপভাবে এসব বিষয় নবী-রাসূলগণের আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত হওয়ার ব্যাপারে প্রমাণ স্বরূপ হওয়ায় এগুলোকে কুরআন মাজীদে ‘বুরহান’ অর্থাৎ প্রমাণ বলা হয়েছে।

মঙ্গলবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০১১

তাওহীদ ও একত্ববাদ

তাওহীদ ও একত্ববাদ
আল্লাহর সত্তা অসীম। আমাদের জ্ঞানের মাধ্যমে অসীম প্রভুর সত্তা সম্বন্ধে যথাযথ পরিচয় লাভ করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই তিনি আল কুরআনের বহু আয়াতে নিজের গুণবাচক পরিচয় তুলে ধরেছেন। আল্লাহর বহু সিফাত ও গুণাবলী রয়েছে। ইমাম আবু মনসূর আল-মাতুরিদী (র) এম মতে আল্লাহর সত্তাসূচক গুণ আটটি;
১.হায়াত ঃ হায়াত আল্লাহ তাআলার একটি গুণ। তিনি চিরন্তন চিরঞ্জীব। তিনি সব সময় আছেন এবং সব সময় থাকবেন। তাঁর অস্তিত্ব অবশ্যম্ভাবী। তিনি সমগ্র সৃষ্টির উৎস। তিনি নিজের ইচ্ছা ও পছন্দ অনুযায়ী যাকে ইচ্ছা অস্তিত্ব দান করেন।
 ২.ইলম ঃ আল্লাহ তায়ালা সর্বজ্ঞানী। সর্ববিষয়ে তাঁর জ্ঞান অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতে সমভাবে পরিব্যাপ্ত। তাঁর জ্ঞানের ত্র“টি-বিচ্যুতির কোন সম্ভাবনা নেই। প্রকাশ্য অথবা গোপন, অতীত অথবা ভবিষ্যত , দুনিয়া অথবা আখিরাত সবকিছুই তাঁর নিকট সমান। কোন কিছুই তাঁর অগোচরে নেই। তাঁর ইলম, চিরন্তন ও বসীত (অবিভাজ্য)। তাঁর ইলম সমস্ত সৃষ্টি পরিব্যাপ্ত। তিনি গোটা সৃষ্টির প্রতি সর্বদা নজর রাখেন। যমীনের বুকে বিশাল মরুভূমিতে যত ডালপালা রয়েছে, প্রতিটি ডালে যতটি ছড়া রয়েছে এবং প্রতিটি ছড়ায় যত শস্যদানা রয়েছে, মানুষের মাথায় ও পশুর চামড়ায় যত পশম রয়েছে সব কিছুউ আল্লাহর ইলমে বিদ্যমান। সৃষ্টি জগতের প্রতিলালনে যখন যার যা কিছু দরকার সকই তাঁর অসীম জ্ঞানের অন্তর্ভূক্ত। আল-কুরআনে ইরশাদ হয়েছেঃ
“তোমরা তোমাদের কথা গোপনেই বল অথবা প্রকাশ্যে বল তিনি তো অন্তর্যামী। যিনি সৃষ্টি করেছেন তিনি কি জানেন না।? তিনি সূক্ষ্মদর্শী, সম্যক অবগত।”               (সূরা-মুলক, ৬৭ঃ১৩-১৪)
আরও বলা হয়েছে ,
“ সমস্ত গায়েবের চাবিকাঠি তাঁরই হাতে। তিনি ছাড়া আর কেউই তা জানেনা। স্থল ও জলভাগে যা কিছুই আছে এর সব কিছুই তিনি জানেন। তাঁর অজ্ঞাতসারে একটি পাতাও পড়া না। কৃত্তিকারর অন্ধাকারে এমন কোন শস্যকণাও অংকুরিত হয় না এবং কিংবা শুকনো এমন কোন বস্তু নেই যা সুস্পষ্ট কিতাবে নেই।” ( সূরা-আন’আম, ৬ঃ৫৯)
৩. ইচ্ছা বা সকল্প ঃ এ বিশাল পৃথিবী আল্লাহ তাআলাই সৃষ্টি করেছেন এবং তিনি নিজের ইচ্ছায়ই তা করেছেন। এ বিশ্ব তিনি তাঁর ইচ্ছামাফিক সৃষ্টি করেছেন। যখন যা সৃষ্টি করতে চেয়েছেন। তিনি কারো বাধ্য নন। রঙ-বেরঙের বিভিন্ন জিনিস যা আসমান –যমীনে দেখা যায় এগুলোসবই আল্লাহর ইচ্ছার বহিঃপ্রকাশ। আল-কুরআনে ইরশাদ হয়েছে ঃ
                                          “ নিশ্চয়ই তোমার প্রতিপালক তাই করেন যা তিনি ইচ্ছা করেন।”        (সূরা-হূদ. ১১ঃ১০৭)
৪. কুদরত বা শক্তিঃ এ বিশ্ব এর গতি এবং স্থিতি সবই আল্লাহ তাআলার অসীম কুদরত এবং শক্তিমত্তারই বহিঃপ্রকাশ। বস্তুর মধ্যে যে শক্তি নিহিত রয়েছে তার উৎস বস্তু নয়। বরং এর উৎস আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের কুদ্তর। মাটি ভেদ করে চারা গাছ বের হয়ে আসে এবং ধীরে ধীরে তা বড় হয়ে থাকে। অবশেষে তা শক্তিশালী হয়ে নিজ মেরুদন্ডের উপর দাঁড়িয়ে থাকতে সক্ষম হয়। এটিও আল্লাহর কুদরতের  বিরাট নিদর্শন। নদীর প্রবল স্রোতধারায় এক কূল ভাঙ্গে অপর কূল গড়ে । এ সবই আল্লাহর অসীম কুদরতের নিদর্শন।
৫. শ্রবণ শক্তি ঃ উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রা) বলেন, যাবতীয় প্রশংসা ঐ মহান সত্তার যিনি সমস্ত আওয়াজ শুনতে পান। একবার খাওলা (রা) রাসূলুল্লাহ (সা) –এর দরবারে আসেন। তারপর তিনি ঘরের এক কোণে বসে রাসূলুল্লাহ (সা)- এর সাথে কথা বললেন। আমি তাঁর কথা শুনতে পাইনি। তখন আল্লাহ তা’আলা এ আয়াত নাযিল করেনঃ
 “ আল্লাহ সে মহিলাটির কথা অবশ্যই শুনতে পেয়েছেন যে তার স্বামীর বিষয়ে আপনার সঙ্গে বাদানুবাদ করছে এবং আল্লাহর নিকট ফরিয়াদ করছে। আল্লাহ তোমাদের কথোপকথন শুনেন। আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।”             (সূরা-মুজাদালা, ৫৮ঃ১)
৬. দৃষ্টি শক্তিঃ আল্লাহ তা’আলা সর্বশ্রোতা, তিনি সর্মক দ্রষ্টাও বটে। সৃষ্টির সব কিছুই তিনি দেখেন। সমস্ত সৃষ্টি তাঁর দৃষ্টির অধিগত। এমন কোন বস্তু নেই যা তাঁর দৃষ্টির অগোচরে।  তাঁর দৃষ্টিশক্তি কোন উপকরণের মুখাপেক্ষী নয়। যত গভীর অন্ধকারই হোক না কেন সেখানেও তাঁর দৃষ্টি পৌঁছে যায়। ইরশাদ হয়েছে ঃ
                                  “ তিনি কত সুন্দর দ্রষ্টা ও শ্রোতা।”            (সূরা-কাহ্ফ,  ১৮ঃ২৬)  
 ৭. কালামঃ এ বিশ্ব ব্যবস্থাপনায় জিন , ইনসান, ফিরিশতা তথা সৃষ্টিকূলের পরিচালনার জন্য আল্লাহ তা’আলা আদেশ , নিষেধ, হুকুম-আহকাম জারী করেছেন এর সব কিছু কালামের মাধ্যমেই হয়েছে। কুরআন আল্লাহর কালাম। তা মাখলূক নয় বরং কাদীম ও চিরন্তন। আল্লাহর কালাম অসীম যেমন তাঁর সত্তা অসীম। তাঁর কালামের কোন শেষ নেই। আল কুরআনে ইরশাদ হয়েছেঃ
  “ পৃথিবীর সমস্ত বৃক্ষ যদি কলম হয় এবং সমুদ্র হয় কালি এবং এর সাথে আরো সাত সমুদ্র যুক্ত তবুও আল্লাহর বাণী নিঃশেষ হবে না। আল্লাহ পরাক্রমশালী , প্রজ্ঞাময়। ”                           (সূরা-লুকমান, ৩১ঃ২৭)
 ৮. তাকভীনঃ আসমান, যমীন, আরশ, কুরসী, লাওহ্, কলম , জীবজন্তু, বৃক্ষলতা একক কথায় সবকিছুই আল্লাহ তাআলা সৃষ্টি করেছেনা। দৃশ্য-অদৃশ্য সব কিছুর স্রষ্টা তিনিই। আমাদের কর্মের স্রষ্টাও তিনি। এ সম্বন্ধে ইরশাদ হয়েছে ঃ
         “প্রকৃতপক্ষে আল্লাহই সৃষ্টি করেছেন তোমাদেরকে এবং তোমরা যা তৈরি কর তাও।”                     (সূরা-সাফ্ফাত , ৩৭ঃ৯৬)

ঈমান, আমল ও ইহ্সানের নাম দীন

ঈমান , আমল ও ইহসানের নাম দীন।
১.ঈমান ঃ ঈমান অর্থ হল , শরী‘আতের যাবতীয় হুকুম-আহকাম অন্তর দিয়ে বিশ্বাস করা এবং এগুলোকে নিজের দীন হিসাবে বরণ করে নেওয়া। পরিপূর্ণ মুমিন সেই ব্যক্তি যিনি শরীআতের বিষয়গুলোকে গভীরভাবে বিশ্বাস করেন এবং এগুলোর মৌখিক স্বীকৃতসহ বাস্তব জীবনে পূর্ণাঙ্গভাবে আমল করে চলেন। ঈমানের মৌলিক বিষয়গুলো পবিত্র করআন ও হাদীসের বিভিন্ন স্থানে বর্ণিত আছে। ঈমানে মুফাস্সাল শীর্ষক বাক্যে সেই বিষয়গুলোর সহজ বর্ণনা পাওয়া যায়। যেমন ঃ
“আমি ঈমান আনলাম আল−াহ উপর, তাঁর ফেরেশতাগণের উপর, তাঁর কিতাবসমূহের উপর ও তাঁর রাসূলগণেরউপর। আরও ঈমান এনেছি শেষ দিবসে ও তাকদীরের ভালমন্দে- যা আল−াহর পক্ষ থেকে হয় এবং মৃত্যুর পর পুনরুত্থানের উপর।”

উল্লিখিত মৌলিক বিষয়গুলোর উপর দৃঢ় বিশ্বাস ব্যতীত কস্মিককালেও ঈমান পরিপূর্ণ হবে না। যিনি এগুলোতে আন্তরিক বিশ্বাস রাখবেন তাকেই মুমিন বলা হবে।
২. আমল ঃ আমল বিভিন্ন প্রকার। যেমন, ক) ইবাদাত, খ) মু‘আমালাত-লেনদেন, গ) মু‘আশারাত-আচার আচরণ, ঘ) সিয়াসাত-রাষ্ট্রনীতি, ঙ) ইক্তিসাদিয়্যাত-অর্থনীতি, চ) দাওয়াত ও জিহাদ।
ক) ইবাদাত ঃ ইবাদাত চার প্রকার। যেমন- নামায , রোযা, হাজ্জ ও যাকাত।
নামায : পৃথিবীর লোভ লালসার মধ্যেও যেন মানুষ সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কথা ভুলে না যায় তাই দৈনিক পাঁচবার নামায আদায় করার হুকুম দেওয়া হয়েছে।
রোযা : নিজের মধ্যে তাক্ওয়া ও সংযম অভ্যাস গড়ে তোলার জন্য বছরে একমাস রোযা রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
যাকাত : সামর্থ্যবানদের প্রতি বছর নিজ অর্থসম্পদ থেকে নির্দ্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য প্রদান করার বিধান রয়েছে।
হাজ্জ : সামর্ধ্যবান হলে আল্লাহর মহব্বতে মাতোয়ারা হয়ে জীবনে একবার হাজ্জ আদায় করার হুকুম রয়েছে।
খ) মু‘আমালাত-লেনদেন : লেনদেনে সততা ও আমানতদারী রক্ষা করে চলার প্রতি ইসলাম বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছে।
গ) মু‘আশারাত-আচার আচরণ : পরিবার , সমাজ, ছোট-বড়, ধনী-দরিদ্র. আপন-পর, নর-নারী, সকলের প্রতি কিরূপ ব্যবহার করতে হবে এ ক্ষেত্রেও ইসলামের বিধিবিধান রয়েছে।
ঘ) সিয়াসাত-রাষ্ট্রনীতি : ইসলাম যেহেতু পূর্ণাঙ্গ দীন , তাই রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রেও ইসলাম নীতিমালা ঘোষণা করেছে। ইসলাম রাষ্ট্রনীতি ধর্ম থেক বিচ্ছিন্ন কোন বিষয় নয়।
ঙ) ইক্তিসাদিয়্যাত-অর্থনীতি : অর্থ উপার্জন ও ব্যয় এবং ব্যবসা-বানিজ্য ইত্যাদি কিভাবে পরিচালনা করতে হবে এ ক্ষেত্রে আল্লাহ তাআলা বিধান মেনে চলা একান্ত আবশ্যক। অর্থনৈতিক জীবনে যাতে ভারসাম্য ক্ষুন্ন না হয় সেজন্য শরীআতের সীমালঙ্ঘন করে আপন প্রবৃত্তি ও খেয়াল-খুশি মুতাবিক উজার্জন ও ব্যয় করাকে ইসলামে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
চ) দাওয়াত ও জিহাদ : ইসলাম শাশ্বত জীবন ব্যবস্থ্।া এই দীনকে টিকিয়ে রাখতে হলে দাওয়াতের কোন বিকল্প নেই। দাওয়াত মানে পথহারা মানুষকে আল্লাহর দিকে, সিরাতে মুত্তাকীমের দিকে আহবান করা। মানুষকে সৎ কাজের নির্দেশ দেওয়া।  যারা অসৎ কাজে বাধা দেয় না তাদেরকে অভিশপ্ত বলা হয়েছে।
দাওয়াতের পাশাপাশি জিহাদও ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল। জীবনের সর্বক্ষেত্রে দীনের নির্দেশসমূহ যিন্দা করা এবং ইসলামের অনুশাসন মেনে চলা যেমন একজন মুমিনের দায়িত্ব অনুরূপভাবে দীনের হিফাযতের জন্য জান-মাল উৎসর্গ করে জিহাদের ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়াও একান্ত কর্তব্য।
ছ) ইহসান ও আধ্যাতিœকতা ঃ ইহ্সান বিদ্যুতের পাওয়ার হাউজের মত। পাওয়ার হাইজের সাথে সংযোগ না থাকলে যেমন বাতি জ্বলে না, অনুরূপভাবে আধ্যাতিœক উৎসর্গ সাধন ব্যতিরেকে বান্দার কোন আমল ও ইবাদতই আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হয় না। এ কারণেই ইসলাম এ বিষয়টির প্রতি খুব বেশি গুরুত্ব আরোপ করেছে। ইহ্সানের মূল কথা হল ঃ ক্রোধ. লোভ, মোহ, হিংসা-বিদ্বেষ, গীবত, অপবাদ. মিধ্যা অহংকার ইত্যাদি মন্দভাব হতে পাক পবিত্র হয়ে ইখ্লাস, আমানতদারী , বিনয় ও নম্রতা, সততা ও ন্যায়পরায়ণতা ইত্যাদি উত্তম চরিত্রের দ্বারা নিজেকে সুশোভিত করা। বস্তুত এর জন্য নিরলস সাধনা ও মুজাহাদা আবশ্যক। মুজাহাদার মাধ্যমে মানুষ স্রষ্টার সঙ্গে যোগসুত্র স্থাপন করতে সক্ষম হয়। তখনই সে হতে পারে শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী, আশরাফুল মাখলূকাত। এর জন্য আত্মার সংশোধন আবশ্যক। সস্তুত আত্মাই দেহকে পরিচালিত করে, দেহ আত্মাকে নয়। একারণেই রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন ঃ
             “নিশ্চয়ই মানুষের শরীরে একটি গোশ্তের টুকরা আছে। তা বিশুদ্ধ থাকলে গোটা শরীর সুস্থ থাকে। আর তা বিনষ্ট হলে গোটা শরীরই ব্যাধিগ্রস্থ হয়ে যায়। জেনে রাখ ঐ গোশতের টুকরা হল মানুষের কালব বা আত্মা।”          (সহীহ বুখারী , ঈমান অধ্যায়)

ইসলাম শান্তি ও সম্প্রীতির ধর্ম

ইসলাম শান্তি ও সম্প্রীতির ধর্ম। ইসলাম নিজের মত অন্যদেরকেও ভঅলবাসতে উদ্বুদ্ধ করে। ইসলাম মানুষকে নিজের, স্বজনের, সমাজের, স্বদেশের তথা বিশ্ববাসীর কল্যাণের জন্য সক্রিয় ভূমিকা পালনে ও ত্যাগ স্বীকারের প্রেরণা যোগায়। আর তাতেই বিশ্ববাসীর জীবন ধারায় নেমে আসে প্রশান্তি এবং বিদূরিত হয়ে অশান্তি, হিংসা, বিদ্বেষ এবং হানাহানি। ইসলামের শিক্ষা হল, মানুষে কোন ভেদাভেদ নেই। সাদা- কালো সকল মানুষই আল্লাহর বান্দা। সমগ্র মানবজাতি একই পরিবার ভুক্ত। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেনঃ
       ‘‘ সকল সৃষ্টি আল্লাহর পরিবারের ন্যায়।’’
বস্তুত মানব জাতি একটি দেহের মত। কেননা আমরা সকলেই আদম ও হাওয়া (আ)-এর সন্তান। আল-কুরআনে ইরশাদ হয়েছে ঃ
“”হে মানুষ! আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি এক পুরুষ ও এক স্ত্রী হতে, পরে তোমাদেরকে বিভক্ত করেছি বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে, যাতে তোমরা একে অপরের সাথে পরিচিত হতে পার। তোমাদের মধ্যে আল্লাহর নিকট সে ব্যক্তিই অধিক মর্যাদাসম্পন্ন যে অধিক মুত্তাকী। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব কিছু জানেন, সমস্ত খবর রাখেন। (সূরা হুজরাত, ৪৯:১৩)
মানুষ দৈনন্দিন জীবন যাপনে প্রাণী ও প্রাকৃতিক সম্পদ আবশ্যক। তাই পথিবীতে শান্তি ও সমৃদ্ধির লক্ষ্যে ইসলাম শুধু মানুষের প্রতিই সদয় ব্যবহারের নির্দেশ দেয়নি, উপরন্তু প্রাণীর পরিচর্যা, প্রাকৃতিক সম্পদ ও উদ্ভিদের যথার্থ ব্যবহার সম্পর্কেও ইসলাম গুরুত্ব আরোপ করেছে। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন ঃ
“ যারা দয়া করে, দয়াময় আল্লাহ তাদের প্রতি দয়া করেন। তোমরা পৃথিবীবাসীদের প্রতি দয়া কর তাহলে আকাশবাসী ( আল্লাহ) তোমাদের প্রতি দয়া করবেন। ”          ( তিরমিযী ও আবূ দাঊদ)
আল্লাহ আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত, একদা তিনি রাসূলুল্লাহ্ (সা) থেকে বর্ণিত,  একদা তিনি রাসূলুল্লাহ (েসা) এর সঙ্গে আরাফা হতে মুযদালিফার দিকে যাচ্ছিলেন। তখন নবী করীম (সা) তাঁর পিছনে উট হাঁকানো এবং প্রহারের আওয়াজ শুনতে পেলেন। তিনি তাদের দিকে ফিরে চাবুক দিয়ে ইশারা করে বললেন, হে লোকসকল! তোমরা ধীরে-স্থিরভাবে চল। কেননা উট দৌড়িয়ে নিয়ে যাওয়া কোন নেকীর কাজ নয়। (মিশকাত, হজ্জ অধ্যায়)
মোটকথা সমস্ত সৃষ্টি জড় , অজড়, প্রাণী ও প্রকৃতি সকলেই ইসলামের উদারতায় উদ্ভাসিত। ইসলাম শুধু বিশ্বাসভিত্তিক ধর্ম নয়। বরং তা বিশ্বাস ও কর্মের এক সুষম সমন্বয়ের বাস্তব অভিব্যক্তি। সে জন্যই বৈরাগ্য ইসলামে নিষিদ্ধ। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন ঃ
           “ইসলামে বৈরাগ্যের স্থান নেই।”
এ হাদীসের এ বাণী প্রতিটি মানুষকে নিজের জন্য, আতœীয়-স্বজনের জন্য, পরের জন্য দেশের জন্য, জাতির জন্য তথা বিশ্বের জন্য কর্রে উদ্বুদ্ধ করে। কর্মেই মূলত মানুষের মানবীয় পরিচয় বিকাশের এবং মনুষত্ব প্রকাশের সুযোগ এন দেয়। কাজেই প্রত্যেক মুসলমানেকে তার নিত্যদিনের চিন্তা-কর্মে এ কথা প্রমাণ করতে হবে যে সে আল্লাহর বান্দা এবং নবীজীর উম্মত। আল-কুরআনে ইরশাদ হয়েছে ঃ
“আমি জিন ও ইনসানকে শুধু ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছি।”                (সূরা-যারিয়াত, ৫১ঃ৫৬)
উল্লিখিত আয়াতে যে ইবাদতের কথা ব্যক্ত হয়েছে সে ইবাদত শুধু নামায, রোযা, হাজ্জ, যাকাত ইত্যাদিতে সীমাবদ্ধ নয়। বরং উপরোক্ত আমলের আগে-পরে কর্মমুখর মুহূর্তগুলোতেও আল্লাহ তাআলাকে বেশী বেশী স্মরণ করতে হবে যেন বৈষয়িক লোভ-লালসায় পড়ে কেউ পথভ্রষ্ট ও বিপথগামী না হয়ে যায়। প্রতিদিনের সকল কাজ-কর্মে আল্লাহর নির্দেশ পালন ও রাসূলুল্লাহ (সা) এর আদর্শের অনুসরণই হল উল্লিখিত আয়াতে ইবাদতের মূল তাৎপর্য।

সোমবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০১১

ইসলাম পরিচিতি

ইসলাম আরবী শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ অনুগত হওয়া, আনুগত্য করা, আতœসমর্পন করা, শান্তির পথে চলা ও মুসলমান হওয়া। শরী‘আতের পরিভাষায় আল্লাহর অনুগত হওয়া, আনুগত্য করা ও তার নিকট পূর্ন আত্মসমর্পন করা; বিনা দ্বিধায় তাঁর আদেশ-নিষেধ মেনে চলা এবং তাঁর দেয়া বিধান অনুসারে জীবন যাপন করা। আর যিনি ইসলামের বিধান অনুসারে জীবন করেন, তিনি হলেন মুসলিম বা মুসলমান।
ইসলাম আল্লাহর তা‘আলার মনোনিত একমাত্র দীন-একটি পূর্নাঙ্গ ও পরিপূর্ন জীবন ব্যবস্থা। দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত এ ব্যবস্থার আলোকে একজন মুসলমানকে  জীবন যাপন করতে হয়। ইসলামে রয়েছে সুষ্ঠু সমাজ , রাষ্ট্র ও অর্থ ব্যবস্থা। রয়েছে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নীতিমালা। মানব চরিত্রের উৎকর্ষ সাধন, ন্যায়নীতি ও সুবিচার ভিত্তিক শান্তি -শৃংখলাপূর্ন গতিশীল সুন্দর সমাজ গঠন ও সংরক্ষণে ইসলামের কোন বিকল্প নেই , হতেও পারে না।  পবিত্র কোরআনে আল্লাহ্ তা‘আলা বলেছেন,
“ইসলামই আল্লাহর একমাত্র মনোনীত দীন।” – (সূরা আলে ইমরান, ৩:১৯)
অন্যত্র বলা হয়েছে. “ কেউ ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন দীন দীন গ্রহণ করতে চাইলে তা কখনো কবুল করা হবে না। -(সূরা আলে ইমরান,৩ঃ১৯)
হাদীস শরীফে ইসলামের একটি সংগা  ও পরিচিতি সুন্দরভাবে বিবৃত হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন,  “ইসলাম হল , আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর রাসূল বলে সাক্ষ্য দেয়া, সালাত আদায় করা, যাকাত প্রদান করা, রমযানের রোযা পালন করা এবং যাতায়াতের সামর্থ থাকলে বায়তুল্লাহ্ শরীফে হজ্জ আদায় করা। ( বুখারী ও মুসলিম)
প্রকৃত পক্ষে ইসলামই সকল নবী রাসূলের অভিন্ন ধর্ম। হযরত আদম (আ) থেকে শুরু করে শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা) পর্যন্ত আগমনকারী সকল নবী রাসূলগণই মানুষকে ইসলামের দিকেই আহবান করেছেন এবং এরই ভিত্তিতে নিজ নিজ উম্মাতকে গড়ে তুলেছেন।
ইসলাম ধর্মের মর্ম  হল, আল্লাহর পরিপূর্ণ আনুগত্য করা। আর প্রত্যেক পয়গম্বরই যেহেতু নিজে  আল্লাহর পূর্ণ অনুগত থাকার সাথে সাথে উম্মাতকেও এর দিকে দাওয়াত দিয়েছেন, তাই সকল নবীর দীনই ইসলাম।
হযরত ইব্রাহীম (আ) -ই সর্বপ্রথম নিজ ধর্মের নাম ইসলাম এবং তাঁর উম্মাতকে ‘উম্মাতে মুসলিমা’ বলে অভিহিত করেন। ইরশাদ আছে “ হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের উভয়কে মুসলিম তথা তোমার অনুগত বানাও এবং আমাদের বংশধর হতেও এক উম্মাতে মুসলিমা অর্থাৎ তোমার এক অনুগত উম্মাত বানাও। (সূরা বাকারা, ২ঃ১২৮)
হযরত ইব্রাহীম (আ)-তার সন্তানদের প্রতি অসিয়্যত করে বলেছেনঃ    
                                          ‘তোমরা মুসলিম না হওয়া অবস্থায় মৃত্যুবরণ করো না।’   (সূরা বাকারা, ২ঃ১৩২)
হযরত ইব্রাহীম (আ)- উম্মাতে মুহাম্মাদীকে এ নামে অভিহিত করেছেন। আলকুরআনে বলা হয়েছে ঃ এটা তোমাদের পিতা ইব্রাহীমের মিল্লাত। তিনি পূর্বে তোমাদের নামকরণ করেছেন ‘মুসলিম’ এবং এ কিতাবেও । (সূরা হজ্জ, ২২ঃ৭৮)
মোটকথা, নবী-রাসূলগণের প্রচারিত ধর্মে মৌলিক কোন পার্থক্য ছিল না। কিন্তু প্রত্যেকের শরী‘আত ছিল ভিন্ন ভিন্ন। আল কুরআনে আছে –
                                            “আমি তোমাদের প্রত্যেকের জর্ন শরীআত ও স্পষ্ট পথ নির্ধারণ করেছি।  ( সূরা মায়িদা. ৫ঃ৮৯)
হযরত আদম (আ) থেকে আরম্ভ করে নবী রাসূলগণের যে সিলসিলা শুরু হয়েছিল তার পরিসমাপ্তি ঘটেছে হযরত মুহাম্মদ ( সা) এর মাধ্যমে। তিনি আখেরী নবী । তাঁর পর আর কোন নবী রাসূল আসবেন না। তাঁর আগমনে পূর্ববর্তী সমস্ত শরীআত রহিদ হয়ে গেছে। তাই এখন ‘ইসলাম’ বলতে হযরত মুহাম্মদ (সা) আনীত শরীআতকে এবং মুসলিম বলতে উম্মাতে মুহাম্মাদীকেই বুঝাবে। এই হিসাবে ইসলামের সংগা হলঃ
আল্লাহ তাআলার পক্ষ হতে হযরত মুহাম্মদ (সা) যে আদর্শ ও বিধি বিধান এসেছেন, যা অকাট্যভাবে প্রমাণিত তা মনে প্রাণে বিশ্বাস করাকেই ইসলাম বলা হয়।
প্রকৃতপক্ষে  রাসূলুল্লাহ (সা.) এর নির্দেশনা মুতাবিক নিজেকে আল্লাহর নিকট সঁপে দেওয়া এবং পরিপূর্নভাবে আত্মসমর্পন করার নামই হল ইসলাম। যে আত্মসমর্পন করে তাকে বলা হয় মুসলিম। ইসলাম গ্রহণ করার পর কোন ব্যক্তির ইসলাম পরিপন্থী নিজস্ব খেয়াল খুশি এবং ধ্যান ধারণার অনুসরণের কোন সুযোগ থাকে না। সে আল্লাহ তাআলার গোলাম । তার হায়াত -মউত –জীবন- মরণ সব কিছুই এক আল্লাহর উদ্দেশ্যে নিবেদিত । আল কুরআনে বলা হয়েছেঃ
আল্লাহ ও তার রাসূল কোন বিষয়ে  নির্দেশ দিলে  কোন মুমিন পুরুষ কিংবা নারীর সে বিষয়ে ভিন্ন সিদ্ধান্তের অধিকার থাকবে না। কেউ আল্লাহর ও তাঁর রাসূলকে অমান্য করলে সে তো স্পষ্টই পথভ্রষ্ট হবে। ( সূরা আহ্যাব, ৩৩ঃ৩৬)
এ আত্মসমর্পণের মূর্ত প্রতীক ছিলেন রাসূলুল্লাহ (সা.) । জীবনের কোন ক্ষেত্রে এক বিন্দু পরিমাণও এ থেকে তিনি বিচ্যুত হননি। সাহাবায়ে কিরামকে এভাবেই গড়ে তুলেছিলেন তিনি তাঁর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে।

ইসলাম আল্লাহর মনোনীত একমাত্র দীন ও পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা

হযরত মুহাম্মদ (সা) আল্লাহ তা‘আলার আখেরী নবী। কুরআন তাঁর প্রতি নাযিলকৃত আখেরী কিতাব। মহানবী (সা) এর আগমনের পর পূর্ববতী শরী‘আত ও কিতাব সবই রহিত হয়ে গেছে। এরপর আর কোন নবী আসবেন না এবং কোন কিতাবও নাযিল হবে না। যাঁরা এ আকীদা পোষণ করবেন তাঁরা মুসলিম। আর যারা এ আকীদা পোষণ করবে না, তারা অমুসলিম-কাফির।
ইসলাম পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। এতে কোন খুঁত নেই, নেই কোন অপূর্ণতা। আল কুরআনে ইরশাদ হয়েছে ঃ
‘‘ আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দীন পূর্ণাঙ্গ করলাম ও তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দীন মনোনীত করলাম।” (সূরা মায়িদা, ৫ঃ৩)
কুরআন মাজীদে আরও ইরশাদ হয়েছে ঃ
“ এবং আমি আপনার প্রতি এমন কিতাব অবতীর্ণ করেছি যার মধ্যে প্রতিটি সস্তুর স্পষ্ট বর্ণনা বিদ্যমান।” (সূরা নাহ্ল, ১৬ঃ৮৯)
 এতে এ কথা বোঝা যায় যে, মানব জীবনে যা কিছু প্রয়োজন তার সব কিছুর নীতি-নিধারণী বিবরণ আল-কুরআনে আছে। প্রয়োজনীয় জ্ঞানানুশীলনের মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ (সা) এর পবিত্র জীবনাদর্শের ভিত্তিতে সবকিছুই নির্ধারণ করতে হবে। পুজতাহিদ ইমামগণ তাঁদের সম্পূর্ন জীবন ব্যয় করেছেন এই কাজে। মানব জাতির জীবন যাপন-পদ্ধতির পরিপূর্ণ ও সুষ্ঠু সমাধান তুলে ধরেছেন তাঁরা বিস্তৃতভাবে। এই জীবন ব্যবস্থায় কোনরূপ অপূর্ণতার কথা চিন্তা করা যায় না। মানুষের ঈমান-আকীদা থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক জীবনের মূলনীতিসমূহ ইসলামে এমন ভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে যা প্রকৃতপক্ষেই পরিপূর্ণ এবং অতুলনীয়। এতে নতুনভাবে কোন কিছুর সংযোজন বা বিয়োজন করার আদৌ কোন অবকাশ নেই।
ইসলাম আল্লাহ প্রদত্ত এমন এক জীবন ব্যবস্থা যা ভারসাম্যপূর্ণ, স্বভাবসম্মত এবং মানবিক সামর্থ্যরে উপযোগীঅ আল-কুরআনে ঘোষণা করা হয়েছে ঃ 
“ আল্লাহ কারো উপর এমন কোন দায়িত্ব অর্পণ করেন না যা তার সাধ্যাতীত।” ( সূরা বাকারা, ২ঃ২৮৬)