মঙ্গলবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০১১

ইসলাম শান্তি ও সম্প্রীতির ধর্ম

ইসলাম শান্তি ও সম্প্রীতির ধর্ম। ইসলাম নিজের মত অন্যদেরকেও ভঅলবাসতে উদ্বুদ্ধ করে। ইসলাম মানুষকে নিজের, স্বজনের, সমাজের, স্বদেশের তথা বিশ্ববাসীর কল্যাণের জন্য সক্রিয় ভূমিকা পালনে ও ত্যাগ স্বীকারের প্রেরণা যোগায়। আর তাতেই বিশ্ববাসীর জীবন ধারায় নেমে আসে প্রশান্তি এবং বিদূরিত হয়ে অশান্তি, হিংসা, বিদ্বেষ এবং হানাহানি। ইসলামের শিক্ষা হল, মানুষে কোন ভেদাভেদ নেই। সাদা- কালো সকল মানুষই আল্লাহর বান্দা। সমগ্র মানবজাতি একই পরিবার ভুক্ত। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেনঃ
       ‘‘ সকল সৃষ্টি আল্লাহর পরিবারের ন্যায়।’’
বস্তুত মানব জাতি একটি দেহের মত। কেননা আমরা সকলেই আদম ও হাওয়া (আ)-এর সন্তান। আল-কুরআনে ইরশাদ হয়েছে ঃ
“”হে মানুষ! আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি এক পুরুষ ও এক স্ত্রী হতে, পরে তোমাদেরকে বিভক্ত করেছি বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে, যাতে তোমরা একে অপরের সাথে পরিচিত হতে পার। তোমাদের মধ্যে আল্লাহর নিকট সে ব্যক্তিই অধিক মর্যাদাসম্পন্ন যে অধিক মুত্তাকী। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব কিছু জানেন, সমস্ত খবর রাখেন। (সূরা হুজরাত, ৪৯:১৩)
মানুষ দৈনন্দিন জীবন যাপনে প্রাণী ও প্রাকৃতিক সম্পদ আবশ্যক। তাই পথিবীতে শান্তি ও সমৃদ্ধির লক্ষ্যে ইসলাম শুধু মানুষের প্রতিই সদয় ব্যবহারের নির্দেশ দেয়নি, উপরন্তু প্রাণীর পরিচর্যা, প্রাকৃতিক সম্পদ ও উদ্ভিদের যথার্থ ব্যবহার সম্পর্কেও ইসলাম গুরুত্ব আরোপ করেছে। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন ঃ
“ যারা দয়া করে, দয়াময় আল্লাহ তাদের প্রতি দয়া করেন। তোমরা পৃথিবীবাসীদের প্রতি দয়া কর তাহলে আকাশবাসী ( আল্লাহ) তোমাদের প্রতি দয়া করবেন। ”          ( তিরমিযী ও আবূ দাঊদ)
আল্লাহ আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত, একদা তিনি রাসূলুল্লাহ্ (সা) থেকে বর্ণিত,  একদা তিনি রাসূলুল্লাহ (েসা) এর সঙ্গে আরাফা হতে মুযদালিফার দিকে যাচ্ছিলেন। তখন নবী করীম (সা) তাঁর পিছনে উট হাঁকানো এবং প্রহারের আওয়াজ শুনতে পেলেন। তিনি তাদের দিকে ফিরে চাবুক দিয়ে ইশারা করে বললেন, হে লোকসকল! তোমরা ধীরে-স্থিরভাবে চল। কেননা উট দৌড়িয়ে নিয়ে যাওয়া কোন নেকীর কাজ নয়। (মিশকাত, হজ্জ অধ্যায়)
মোটকথা সমস্ত সৃষ্টি জড় , অজড়, প্রাণী ও প্রকৃতি সকলেই ইসলামের উদারতায় উদ্ভাসিত। ইসলাম শুধু বিশ্বাসভিত্তিক ধর্ম নয়। বরং তা বিশ্বাস ও কর্মের এক সুষম সমন্বয়ের বাস্তব অভিব্যক্তি। সে জন্যই বৈরাগ্য ইসলামে নিষিদ্ধ। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন ঃ
           “ইসলামে বৈরাগ্যের স্থান নেই।”
এ হাদীসের এ বাণী প্রতিটি মানুষকে নিজের জন্য, আতœীয়-স্বজনের জন্য, পরের জন্য দেশের জন্য, জাতির জন্য তথা বিশ্বের জন্য কর্রে উদ্বুদ্ধ করে। কর্মেই মূলত মানুষের মানবীয় পরিচয় বিকাশের এবং মনুষত্ব প্রকাশের সুযোগ এন দেয়। কাজেই প্রত্যেক মুসলমানেকে তার নিত্যদিনের চিন্তা-কর্মে এ কথা প্রমাণ করতে হবে যে সে আল্লাহর বান্দা এবং নবীজীর উম্মত। আল-কুরআনে ইরশাদ হয়েছে ঃ
“আমি জিন ও ইনসানকে শুধু ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছি।”                (সূরা-যারিয়াত, ৫১ঃ৫৬)
উল্লিখিত আয়াতে যে ইবাদতের কথা ব্যক্ত হয়েছে সে ইবাদত শুধু নামায, রোযা, হাজ্জ, যাকাত ইত্যাদিতে সীমাবদ্ধ নয়। বরং উপরোক্ত আমলের আগে-পরে কর্মমুখর মুহূর্তগুলোতেও আল্লাহ তাআলাকে বেশী বেশী স্মরণ করতে হবে যেন বৈষয়িক লোভ-লালসায় পড়ে কেউ পথভ্রষ্ট ও বিপথগামী না হয়ে যায়। প্রতিদিনের সকল কাজ-কর্মে আল্লাহর নির্দেশ পালন ও রাসূলুল্লাহ (সা) এর আদর্শের অনুসরণই হল উল্লিখিত আয়াতে ইবাদতের মূল তাৎপর্য।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন