সোমবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০১১

ইসলাম পরিচিতি

ইসলাম আরবী শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ অনুগত হওয়া, আনুগত্য করা, আতœসমর্পন করা, শান্তির পথে চলা ও মুসলমান হওয়া। শরী‘আতের পরিভাষায় আল্লাহর অনুগত হওয়া, আনুগত্য করা ও তার নিকট পূর্ন আত্মসমর্পন করা; বিনা দ্বিধায় তাঁর আদেশ-নিষেধ মেনে চলা এবং তাঁর দেয়া বিধান অনুসারে জীবন যাপন করা। আর যিনি ইসলামের বিধান অনুসারে জীবন করেন, তিনি হলেন মুসলিম বা মুসলমান।
ইসলাম আল্লাহর তা‘আলার মনোনিত একমাত্র দীন-একটি পূর্নাঙ্গ ও পরিপূর্ন জীবন ব্যবস্থা। দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত এ ব্যবস্থার আলোকে একজন মুসলমানকে  জীবন যাপন করতে হয়। ইসলামে রয়েছে সুষ্ঠু সমাজ , রাষ্ট্র ও অর্থ ব্যবস্থা। রয়েছে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নীতিমালা। মানব চরিত্রের উৎকর্ষ সাধন, ন্যায়নীতি ও সুবিচার ভিত্তিক শান্তি -শৃংখলাপূর্ন গতিশীল সুন্দর সমাজ গঠন ও সংরক্ষণে ইসলামের কোন বিকল্প নেই , হতেও পারে না।  পবিত্র কোরআনে আল্লাহ্ তা‘আলা বলেছেন,
“ইসলামই আল্লাহর একমাত্র মনোনীত দীন।” – (সূরা আলে ইমরান, ৩:১৯)
অন্যত্র বলা হয়েছে. “ কেউ ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন দীন দীন গ্রহণ করতে চাইলে তা কখনো কবুল করা হবে না। -(সূরা আলে ইমরান,৩ঃ১৯)
হাদীস শরীফে ইসলামের একটি সংগা  ও পরিচিতি সুন্দরভাবে বিবৃত হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন,  “ইসলাম হল , আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর রাসূল বলে সাক্ষ্য দেয়া, সালাত আদায় করা, যাকাত প্রদান করা, রমযানের রোযা পালন করা এবং যাতায়াতের সামর্থ থাকলে বায়তুল্লাহ্ শরীফে হজ্জ আদায় করা। ( বুখারী ও মুসলিম)
প্রকৃত পক্ষে ইসলামই সকল নবী রাসূলের অভিন্ন ধর্ম। হযরত আদম (আ) থেকে শুরু করে শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা) পর্যন্ত আগমনকারী সকল নবী রাসূলগণই মানুষকে ইসলামের দিকেই আহবান করেছেন এবং এরই ভিত্তিতে নিজ নিজ উম্মাতকে গড়ে তুলেছেন।
ইসলাম ধর্মের মর্ম  হল, আল্লাহর পরিপূর্ণ আনুগত্য করা। আর প্রত্যেক পয়গম্বরই যেহেতু নিজে  আল্লাহর পূর্ণ অনুগত থাকার সাথে সাথে উম্মাতকেও এর দিকে দাওয়াত দিয়েছেন, তাই সকল নবীর দীনই ইসলাম।
হযরত ইব্রাহীম (আ) -ই সর্বপ্রথম নিজ ধর্মের নাম ইসলাম এবং তাঁর উম্মাতকে ‘উম্মাতে মুসলিমা’ বলে অভিহিত করেন। ইরশাদ আছে “ হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের উভয়কে মুসলিম তথা তোমার অনুগত বানাও এবং আমাদের বংশধর হতেও এক উম্মাতে মুসলিমা অর্থাৎ তোমার এক অনুগত উম্মাত বানাও। (সূরা বাকারা, ২ঃ১২৮)
হযরত ইব্রাহীম (আ)-তার সন্তানদের প্রতি অসিয়্যত করে বলেছেনঃ    
                                          ‘তোমরা মুসলিম না হওয়া অবস্থায় মৃত্যুবরণ করো না।’   (সূরা বাকারা, ২ঃ১৩২)
হযরত ইব্রাহীম (আ)- উম্মাতে মুহাম্মাদীকে এ নামে অভিহিত করেছেন। আলকুরআনে বলা হয়েছে ঃ এটা তোমাদের পিতা ইব্রাহীমের মিল্লাত। তিনি পূর্বে তোমাদের নামকরণ করেছেন ‘মুসলিম’ এবং এ কিতাবেও । (সূরা হজ্জ, ২২ঃ৭৮)
মোটকথা, নবী-রাসূলগণের প্রচারিত ধর্মে মৌলিক কোন পার্থক্য ছিল না। কিন্তু প্রত্যেকের শরী‘আত ছিল ভিন্ন ভিন্ন। আল কুরআনে আছে –
                                            “আমি তোমাদের প্রত্যেকের জর্ন শরীআত ও স্পষ্ট পথ নির্ধারণ করেছি।  ( সূরা মায়িদা. ৫ঃ৮৯)
হযরত আদম (আ) থেকে আরম্ভ করে নবী রাসূলগণের যে সিলসিলা শুরু হয়েছিল তার পরিসমাপ্তি ঘটেছে হযরত মুহাম্মদ ( সা) এর মাধ্যমে। তিনি আখেরী নবী । তাঁর পর আর কোন নবী রাসূল আসবেন না। তাঁর আগমনে পূর্ববর্তী সমস্ত শরীআত রহিদ হয়ে গেছে। তাই এখন ‘ইসলাম’ বলতে হযরত মুহাম্মদ (সা) আনীত শরীআতকে এবং মুসলিম বলতে উম্মাতে মুহাম্মাদীকেই বুঝাবে। এই হিসাবে ইসলামের সংগা হলঃ
আল্লাহ তাআলার পক্ষ হতে হযরত মুহাম্মদ (সা) যে আদর্শ ও বিধি বিধান এসেছেন, যা অকাট্যভাবে প্রমাণিত তা মনে প্রাণে বিশ্বাস করাকেই ইসলাম বলা হয়।
প্রকৃতপক্ষে  রাসূলুল্লাহ (সা.) এর নির্দেশনা মুতাবিক নিজেকে আল্লাহর নিকট সঁপে দেওয়া এবং পরিপূর্নভাবে আত্মসমর্পন করার নামই হল ইসলাম। যে আত্মসমর্পন করে তাকে বলা হয় মুসলিম। ইসলাম গ্রহণ করার পর কোন ব্যক্তির ইসলাম পরিপন্থী নিজস্ব খেয়াল খুশি এবং ধ্যান ধারণার অনুসরণের কোন সুযোগ থাকে না। সে আল্লাহ তাআলার গোলাম । তার হায়াত -মউত –জীবন- মরণ সব কিছুই এক আল্লাহর উদ্দেশ্যে নিবেদিত । আল কুরআনে বলা হয়েছেঃ
আল্লাহ ও তার রাসূল কোন বিষয়ে  নির্দেশ দিলে  কোন মুমিন পুরুষ কিংবা নারীর সে বিষয়ে ভিন্ন সিদ্ধান্তের অধিকার থাকবে না। কেউ আল্লাহর ও তাঁর রাসূলকে অমান্য করলে সে তো স্পষ্টই পথভ্রষ্ট হবে। ( সূরা আহ্যাব, ৩৩ঃ৩৬)
এ আত্মসমর্পণের মূর্ত প্রতীক ছিলেন রাসূলুল্লাহ (সা.) । জীবনের কোন ক্ষেত্রে এক বিন্দু পরিমাণও এ থেকে তিনি বিচ্যুত হননি। সাহাবায়ে কিরামকে এভাবেই গড়ে তুলেছিলেন তিনি তাঁর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন