মঙ্গলবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০১১

ঈমান, আমল ও ইহ্সানের নাম দীন

ঈমান , আমল ও ইহসানের নাম দীন।
১.ঈমান ঃ ঈমান অর্থ হল , শরী‘আতের যাবতীয় হুকুম-আহকাম অন্তর দিয়ে বিশ্বাস করা এবং এগুলোকে নিজের দীন হিসাবে বরণ করে নেওয়া। পরিপূর্ণ মুমিন সেই ব্যক্তি যিনি শরীআতের বিষয়গুলোকে গভীরভাবে বিশ্বাস করেন এবং এগুলোর মৌখিক স্বীকৃতসহ বাস্তব জীবনে পূর্ণাঙ্গভাবে আমল করে চলেন। ঈমানের মৌলিক বিষয়গুলো পবিত্র করআন ও হাদীসের বিভিন্ন স্থানে বর্ণিত আছে। ঈমানে মুফাস্সাল শীর্ষক বাক্যে সেই বিষয়গুলোর সহজ বর্ণনা পাওয়া যায়। যেমন ঃ
“আমি ঈমান আনলাম আল−াহ উপর, তাঁর ফেরেশতাগণের উপর, তাঁর কিতাবসমূহের উপর ও তাঁর রাসূলগণেরউপর। আরও ঈমান এনেছি শেষ দিবসে ও তাকদীরের ভালমন্দে- যা আল−াহর পক্ষ থেকে হয় এবং মৃত্যুর পর পুনরুত্থানের উপর।”

উল্লিখিত মৌলিক বিষয়গুলোর উপর দৃঢ় বিশ্বাস ব্যতীত কস্মিককালেও ঈমান পরিপূর্ণ হবে না। যিনি এগুলোতে আন্তরিক বিশ্বাস রাখবেন তাকেই মুমিন বলা হবে।
২. আমল ঃ আমল বিভিন্ন প্রকার। যেমন, ক) ইবাদাত, খ) মু‘আমালাত-লেনদেন, গ) মু‘আশারাত-আচার আচরণ, ঘ) সিয়াসাত-রাষ্ট্রনীতি, ঙ) ইক্তিসাদিয়্যাত-অর্থনীতি, চ) দাওয়াত ও জিহাদ।
ক) ইবাদাত ঃ ইবাদাত চার প্রকার। যেমন- নামায , রোযা, হাজ্জ ও যাকাত।
নামায : পৃথিবীর লোভ লালসার মধ্যেও যেন মানুষ সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কথা ভুলে না যায় তাই দৈনিক পাঁচবার নামায আদায় করার হুকুম দেওয়া হয়েছে।
রোযা : নিজের মধ্যে তাক্ওয়া ও সংযম অভ্যাস গড়ে তোলার জন্য বছরে একমাস রোযা রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
যাকাত : সামর্থ্যবানদের প্রতি বছর নিজ অর্থসম্পদ থেকে নির্দ্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য প্রদান করার বিধান রয়েছে।
হাজ্জ : সামর্ধ্যবান হলে আল্লাহর মহব্বতে মাতোয়ারা হয়ে জীবনে একবার হাজ্জ আদায় করার হুকুম রয়েছে।
খ) মু‘আমালাত-লেনদেন : লেনদেনে সততা ও আমানতদারী রক্ষা করে চলার প্রতি ইসলাম বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছে।
গ) মু‘আশারাত-আচার আচরণ : পরিবার , সমাজ, ছোট-বড়, ধনী-দরিদ্র. আপন-পর, নর-নারী, সকলের প্রতি কিরূপ ব্যবহার করতে হবে এ ক্ষেত্রেও ইসলামের বিধিবিধান রয়েছে।
ঘ) সিয়াসাত-রাষ্ট্রনীতি : ইসলাম যেহেতু পূর্ণাঙ্গ দীন , তাই রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রেও ইসলাম নীতিমালা ঘোষণা করেছে। ইসলাম রাষ্ট্রনীতি ধর্ম থেক বিচ্ছিন্ন কোন বিষয় নয়।
ঙ) ইক্তিসাদিয়্যাত-অর্থনীতি : অর্থ উপার্জন ও ব্যয় এবং ব্যবসা-বানিজ্য ইত্যাদি কিভাবে পরিচালনা করতে হবে এ ক্ষেত্রে আল্লাহ তাআলা বিধান মেনে চলা একান্ত আবশ্যক। অর্থনৈতিক জীবনে যাতে ভারসাম্য ক্ষুন্ন না হয় সেজন্য শরীআতের সীমালঙ্ঘন করে আপন প্রবৃত্তি ও খেয়াল-খুশি মুতাবিক উজার্জন ও ব্যয় করাকে ইসলামে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
চ) দাওয়াত ও জিহাদ : ইসলাম শাশ্বত জীবন ব্যবস্থ্।া এই দীনকে টিকিয়ে রাখতে হলে দাওয়াতের কোন বিকল্প নেই। দাওয়াত মানে পথহারা মানুষকে আল্লাহর দিকে, সিরাতে মুত্তাকীমের দিকে আহবান করা। মানুষকে সৎ কাজের নির্দেশ দেওয়া।  যারা অসৎ কাজে বাধা দেয় না তাদেরকে অভিশপ্ত বলা হয়েছে।
দাওয়াতের পাশাপাশি জিহাদও ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল। জীবনের সর্বক্ষেত্রে দীনের নির্দেশসমূহ যিন্দা করা এবং ইসলামের অনুশাসন মেনে চলা যেমন একজন মুমিনের দায়িত্ব অনুরূপভাবে দীনের হিফাযতের জন্য জান-মাল উৎসর্গ করে জিহাদের ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়াও একান্ত কর্তব্য।
ছ) ইহসান ও আধ্যাতিœকতা ঃ ইহ্সান বিদ্যুতের পাওয়ার হাউজের মত। পাওয়ার হাইজের সাথে সংযোগ না থাকলে যেমন বাতি জ্বলে না, অনুরূপভাবে আধ্যাতিœক উৎসর্গ সাধন ব্যতিরেকে বান্দার কোন আমল ও ইবাদতই আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হয় না। এ কারণেই ইসলাম এ বিষয়টির প্রতি খুব বেশি গুরুত্ব আরোপ করেছে। ইহ্সানের মূল কথা হল ঃ ক্রোধ. লোভ, মোহ, হিংসা-বিদ্বেষ, গীবত, অপবাদ. মিধ্যা অহংকার ইত্যাদি মন্দভাব হতে পাক পবিত্র হয়ে ইখ্লাস, আমানতদারী , বিনয় ও নম্রতা, সততা ও ন্যায়পরায়ণতা ইত্যাদি উত্তম চরিত্রের দ্বারা নিজেকে সুশোভিত করা। বস্তুত এর জন্য নিরলস সাধনা ও মুজাহাদা আবশ্যক। মুজাহাদার মাধ্যমে মানুষ স্রষ্টার সঙ্গে যোগসুত্র স্থাপন করতে সক্ষম হয়। তখনই সে হতে পারে শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী, আশরাফুল মাখলূকাত। এর জন্য আত্মার সংশোধন আবশ্যক। সস্তুত আত্মাই দেহকে পরিচালিত করে, দেহ আত্মাকে নয়। একারণেই রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন ঃ
             “নিশ্চয়ই মানুষের শরীরে একটি গোশ্তের টুকরা আছে। তা বিশুদ্ধ থাকলে গোটা শরীর সুস্থ থাকে। আর তা বিনষ্ট হলে গোটা শরীরই ব্যাধিগ্রস্থ হয়ে যায়। জেনে রাখ ঐ গোশতের টুকরা হল মানুষের কালব বা আত্মা।”          (সহীহ বুখারী , ঈমান অধ্যায়)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন