মঙ্গলবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০১১

তাওহীদ ও একত্ববাদ

তাওহীদ ও একত্ববাদ
আল্লাহর সত্তা অসীম। আমাদের জ্ঞানের মাধ্যমে অসীম প্রভুর সত্তা সম্বন্ধে যথাযথ পরিচয় লাভ করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই তিনি আল কুরআনের বহু আয়াতে নিজের গুণবাচক পরিচয় তুলে ধরেছেন। আল্লাহর বহু সিফাত ও গুণাবলী রয়েছে। ইমাম আবু মনসূর আল-মাতুরিদী (র) এম মতে আল্লাহর সত্তাসূচক গুণ আটটি;
১.হায়াত ঃ হায়াত আল্লাহ তাআলার একটি গুণ। তিনি চিরন্তন চিরঞ্জীব। তিনি সব সময় আছেন এবং সব সময় থাকবেন। তাঁর অস্তিত্ব অবশ্যম্ভাবী। তিনি সমগ্র সৃষ্টির উৎস। তিনি নিজের ইচ্ছা ও পছন্দ অনুযায়ী যাকে ইচ্ছা অস্তিত্ব দান করেন।
 ২.ইলম ঃ আল্লাহ তায়ালা সর্বজ্ঞানী। সর্ববিষয়ে তাঁর জ্ঞান অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতে সমভাবে পরিব্যাপ্ত। তাঁর জ্ঞানের ত্র“টি-বিচ্যুতির কোন সম্ভাবনা নেই। প্রকাশ্য অথবা গোপন, অতীত অথবা ভবিষ্যত , দুনিয়া অথবা আখিরাত সবকিছুই তাঁর নিকট সমান। কোন কিছুই তাঁর অগোচরে নেই। তাঁর ইলম, চিরন্তন ও বসীত (অবিভাজ্য)। তাঁর ইলম সমস্ত সৃষ্টি পরিব্যাপ্ত। তিনি গোটা সৃষ্টির প্রতি সর্বদা নজর রাখেন। যমীনের বুকে বিশাল মরুভূমিতে যত ডালপালা রয়েছে, প্রতিটি ডালে যতটি ছড়া রয়েছে এবং প্রতিটি ছড়ায় যত শস্যদানা রয়েছে, মানুষের মাথায় ও পশুর চামড়ায় যত পশম রয়েছে সব কিছুউ আল্লাহর ইলমে বিদ্যমান। সৃষ্টি জগতের প্রতিলালনে যখন যার যা কিছু দরকার সকই তাঁর অসীম জ্ঞানের অন্তর্ভূক্ত। আল-কুরআনে ইরশাদ হয়েছেঃ
“তোমরা তোমাদের কথা গোপনেই বল অথবা প্রকাশ্যে বল তিনি তো অন্তর্যামী। যিনি সৃষ্টি করেছেন তিনি কি জানেন না।? তিনি সূক্ষ্মদর্শী, সম্যক অবগত।”               (সূরা-মুলক, ৬৭ঃ১৩-১৪)
আরও বলা হয়েছে ,
“ সমস্ত গায়েবের চাবিকাঠি তাঁরই হাতে। তিনি ছাড়া আর কেউই তা জানেনা। স্থল ও জলভাগে যা কিছুই আছে এর সব কিছুই তিনি জানেন। তাঁর অজ্ঞাতসারে একটি পাতাও পড়া না। কৃত্তিকারর অন্ধাকারে এমন কোন শস্যকণাও অংকুরিত হয় না এবং কিংবা শুকনো এমন কোন বস্তু নেই যা সুস্পষ্ট কিতাবে নেই।” ( সূরা-আন’আম, ৬ঃ৫৯)
৩. ইচ্ছা বা সকল্প ঃ এ বিশাল পৃথিবী আল্লাহ তাআলাই সৃষ্টি করেছেন এবং তিনি নিজের ইচ্ছায়ই তা করেছেন। এ বিশ্ব তিনি তাঁর ইচ্ছামাফিক সৃষ্টি করেছেন। যখন যা সৃষ্টি করতে চেয়েছেন। তিনি কারো বাধ্য নন। রঙ-বেরঙের বিভিন্ন জিনিস যা আসমান –যমীনে দেখা যায় এগুলোসবই আল্লাহর ইচ্ছার বহিঃপ্রকাশ। আল-কুরআনে ইরশাদ হয়েছে ঃ
                                          “ নিশ্চয়ই তোমার প্রতিপালক তাই করেন যা তিনি ইচ্ছা করেন।”        (সূরা-হূদ. ১১ঃ১০৭)
৪. কুদরত বা শক্তিঃ এ বিশ্ব এর গতি এবং স্থিতি সবই আল্লাহ তাআলার অসীম কুদরত এবং শক্তিমত্তারই বহিঃপ্রকাশ। বস্তুর মধ্যে যে শক্তি নিহিত রয়েছে তার উৎস বস্তু নয়। বরং এর উৎস আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের কুদ্তর। মাটি ভেদ করে চারা গাছ বের হয়ে আসে এবং ধীরে ধীরে তা বড় হয়ে থাকে। অবশেষে তা শক্তিশালী হয়ে নিজ মেরুদন্ডের উপর দাঁড়িয়ে থাকতে সক্ষম হয়। এটিও আল্লাহর কুদরতের  বিরাট নিদর্শন। নদীর প্রবল স্রোতধারায় এক কূল ভাঙ্গে অপর কূল গড়ে । এ সবই আল্লাহর অসীম কুদরতের নিদর্শন।
৫. শ্রবণ শক্তি ঃ উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রা) বলেন, যাবতীয় প্রশংসা ঐ মহান সত্তার যিনি সমস্ত আওয়াজ শুনতে পান। একবার খাওলা (রা) রাসূলুল্লাহ (সা) –এর দরবারে আসেন। তারপর তিনি ঘরের এক কোণে বসে রাসূলুল্লাহ (সা)- এর সাথে কথা বললেন। আমি তাঁর কথা শুনতে পাইনি। তখন আল্লাহ তা’আলা এ আয়াত নাযিল করেনঃ
 “ আল্লাহ সে মহিলাটির কথা অবশ্যই শুনতে পেয়েছেন যে তার স্বামীর বিষয়ে আপনার সঙ্গে বাদানুবাদ করছে এবং আল্লাহর নিকট ফরিয়াদ করছে। আল্লাহ তোমাদের কথোপকথন শুনেন। আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।”             (সূরা-মুজাদালা, ৫৮ঃ১)
৬. দৃষ্টি শক্তিঃ আল্লাহ তা’আলা সর্বশ্রোতা, তিনি সর্মক দ্রষ্টাও বটে। সৃষ্টির সব কিছুই তিনি দেখেন। সমস্ত সৃষ্টি তাঁর দৃষ্টির অধিগত। এমন কোন বস্তু নেই যা তাঁর দৃষ্টির অগোচরে।  তাঁর দৃষ্টিশক্তি কোন উপকরণের মুখাপেক্ষী নয়। যত গভীর অন্ধকারই হোক না কেন সেখানেও তাঁর দৃষ্টি পৌঁছে যায়। ইরশাদ হয়েছে ঃ
                                  “ তিনি কত সুন্দর দ্রষ্টা ও শ্রোতা।”            (সূরা-কাহ্ফ,  ১৮ঃ২৬)  
 ৭. কালামঃ এ বিশ্ব ব্যবস্থাপনায় জিন , ইনসান, ফিরিশতা তথা সৃষ্টিকূলের পরিচালনার জন্য আল্লাহ তা’আলা আদেশ , নিষেধ, হুকুম-আহকাম জারী করেছেন এর সব কিছু কালামের মাধ্যমেই হয়েছে। কুরআন আল্লাহর কালাম। তা মাখলূক নয় বরং কাদীম ও চিরন্তন। আল্লাহর কালাম অসীম যেমন তাঁর সত্তা অসীম। তাঁর কালামের কোন শেষ নেই। আল কুরআনে ইরশাদ হয়েছেঃ
  “ পৃথিবীর সমস্ত বৃক্ষ যদি কলম হয় এবং সমুদ্র হয় কালি এবং এর সাথে আরো সাত সমুদ্র যুক্ত তবুও আল্লাহর বাণী নিঃশেষ হবে না। আল্লাহ পরাক্রমশালী , প্রজ্ঞাময়। ”                           (সূরা-লুকমান, ৩১ঃ২৭)
 ৮. তাকভীনঃ আসমান, যমীন, আরশ, কুরসী, লাওহ্, কলম , জীবজন্তু, বৃক্ষলতা একক কথায় সবকিছুই আল্লাহ তাআলা সৃষ্টি করেছেনা। দৃশ্য-অদৃশ্য সব কিছুর স্রষ্টা তিনিই। আমাদের কর্মের স্রষ্টাও তিনি। এ সম্বন্ধে ইরশাদ হয়েছে ঃ
         “প্রকৃতপক্ষে আল্লাহই সৃষ্টি করেছেন তোমাদেরকে এবং তোমরা যা তৈরি কর তাও।”                     (সূরা-সাফ্ফাত , ৩৭ঃ৯৬)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন